বিশেষ সম্পাদকীয় :
রাজনীতি একটি শব্দ, যার সমীকরণ অনেক জটিল। এখানে নানান জনের নানান মত নানান পথ। কখনো রাজনীতির চাল সঠিক হলে সমীকরণ মিলে যায়, আবার কখনো চালে ভুল হলে পুরো সমীকরণ-ই পাল্টে যায়। তবে এখনকার রাজনীতির সমীকরণ আজ থেকে দুই দশক আগের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটাই বদলে গেছে। আগের সমীকরণ ছিল অপজিশন পার্টিকে ঘায়েল করা, এখনকার সমীকরণ হলো নিজদলের কাঁটা পরিস্কার করা।
ছাত্ররাজনীতির সুবাধে একসময় রাজনীতির সরল অংক নিয়ে ভাবতাম। বেশিরভাগ অংক মিলে যেত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেলাতে পারতাম না। আবারও ভাবতে বসতাম। এখনকার রাজনীতির অংক অনেক জটিল। নিজ গুহাতেই অনেকগুলো সুড়ঙ্গ। কোন পথে গেলে বেরোনো যাবে বোঝা মুসকিল। যোগ বিয়োগ পূরণ ভাগ কোনটাই মিলেনা। এটা যেন সাপ লুডু খেলার মত। কখনো কখনো ছক্কার গুটি সঠিক চালে না পড়লে সাপের মুখে পড়ে একেবারে নীচে নেমে যেতে হয়। নীচে থেকে আবারও উপরে ওঠতে সময় লেগে যায়। বাধ্য হয়েই খেলা খেলতে হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীর তার লেখা এক গ্রন্থে লিখেছেন- প্রথমে শূন্য এল, তারপর এক এসেই সামনে বসে গেল এবং জায়গা বদল করে ন্যাংটো হল। এরপর দুইও অনুরূপ স্থান পাল্টে জেঁকে বসে ন্যাংটো হল, তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট নয় সম্মিলিত ন্যাংটোর দল এক হল, এবার একশ’ হল।
সবাই এক এক করে ন্যাংটো হয়ে সভ্যতা গড়ল, একে অপরকে উপহাসি দিয়ে বলল- তোর পেটে গু! একজন একা হল, একক হল কেউ দশক শতক সহস্র লক্ষ কোটি দল গঠন করল, লসাগু দল গসাগু দল পরিচয়ের জন্য গুণনীয়ক মার্কা হল। রাজনীতি চলে আসলো সবচেয়ে ধূর্ত, এমন জটিলতা পাকাল, যে সে নিজের নাম দিয়ে বসল সরল অংক। আশ্চর্য, শিশুগণ কোমল মনে অংক কষতে বসল এবং অংক কষতে কষতে ন্যাংটো হয়ে গেলো। গুণ হল ভাগ হল যোগ বিয়োগ সবই হল, অবশিষ্ট যা রইল তা কেউ নিল না। সকলেই ভাগফল যোগফল গুণফল বিয়োগ ফল হিসেব শুরু করল। পন্ডিতের দল লেখকের দল কবির দল পাঠকের দল ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে পেতে শেষে সংখ্যাগুলো সব হ্রাস পেল।
আজকের রাজনীতির অবস্থাটা এমনই মনে হচ্ছে। কোনটা মেলাবো, মাইনাসে মাইনাসে প্লাস, নাকী প্লাসে প্লাসে মাইনাস? সময়-ই তা বলে দিবে।
বাংলায় একটি কথা আছে- ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’। ‘সচিবের গাড়ির কনস্টেবলও সচিব’ শিরোনামে প্রকাশিত সেই খবরটির কথা মনে পড়ে গেলো। শুধু ক্ষমতাসীনরাই নয় তাদের আশপাশে যারা থাকেন, অনেক সময় তাদের দাপট মূল ব্যক্তিকেও ছাড়িয়ে যায়। ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তারা। কিছু হলে বস তো আছেই। কিন্তু বসের ওপরও তো বস আছে। কিংবা বলা যায় সবাই তো আর ক্ষমতার দাম্ভিকতার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন না। দেশে চুনোপুঁটি হয়ে রাঘববোয়ালের মত আচরণ করার মত মানুষ যেমন আছেন তেমনি আছেন দায়িত্বশীল এবং নীতিবান মানুষও। নইলে সমাজটা টিকে কী করে! কথায় আছে- ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও।’ তাই সবার আগে শুধরে নিতে হবে নিজেকেই।
আত্মসন্মান বোধ সম্পন্ন মানুষেরা সন্মানটাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখেন। তারপর অন্য সবকিছু। যেখানে সন্মান নেই, সেখানে সমর্থন অটুট রাখার প্রশ্নই ওঠে না। আত্মনির্ভরশীলতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আমি নিজের প্রতি অগাধ আত্মবিশ্বাসী। তাই, সততার সাথে এগিয়ে যেতে চাই। যাদের নিজের পায়ে শক্ত করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা এখনো তৈরী হয়নি, তারা রাজ্য জয় করার স্বপ্ন দেখেন? দেখা যাক পরীক্ষায় তারা পাশ করতে পারেন কীনা?
মো. আলী হোসেন, সাংবাদিক ও লেখক
ahossain640@gmail.com