বৃহস্পতিবার ২৩শে মার্চ, ২০২৩ ইং ৯ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

চন্দ্রগঞ্জ ইউপি নির্বাচন : হারতে হারতে বিজয়ের গল্প

বিশেষ প্রতিবেদন :

২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে নির্বাচন। ভোটের দিনের আবহাওয়াটা বেশ চমৎকারই ছিল। শীতের সকালে সূর্যের আলোকরশ্মি দক্ষিণ কোণে আঁছড়ে পড়েছে। আগেরদিন শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরেই ঘুমিয়ে পড়ি। কারণ, পরদিন রোববার ভোটের ডিউটি আছে। মোবাইলে ভোর সাড়ে ৫টায় এলার্ম দিয়ে রেখেছি। একদিকে মসজিদে ফজরের আজান পড়েছে, অন্যদিকে মোবাইলের এলার্ম বেজে ওঠায় ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই অজু করে নামাজ শেষ করলাম। এরমধ্যে চুলায় পানি বসালাম গরম করতে। কারণ, পৌষমাসের তীব্র শীতে ভোর বেলায় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারি। পানি ফোটানো হলে পুকুরঘাটে গিয়ে গোসল সেরে দ্রুত জামা-কাপড় পরে বেরিয়ে পড়ি, তখন সকাল ৭টা।

আমার নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ টিমের অন্যান্য সদস্যরাও এসে গেছেন। সবাই নাস্তা সেরে প্রস্তুতি নিচ্ছি ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার। আমাদের আরো দুটি সাংবাদিক টিম তারা লক্ষ্মীপুর থেকে রওনা দিয়েছেন চন্দ্রগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সকাল ৮টায় তারা পৌঁছে যায়, হযরত দেওয়ানশাহ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। মোবাইলে তাদের সাথে কথা হচ্ছিল, তারা জানিয়েছে ভোট গ্রহণ শুরুর একটি ফুটেজ তারা আগে চ্যানেলগুলোতে পাঠাবে। তাই তারা হযরত দেওয়ানশাহ কেন্দ্রে গিয়েছেন ফুটেজ নেওয়ার জন্য। পরে দেওপাড়া কেন্দ্রে তাদের সাথে একবার দেখা হলেও পরে আর সারাদিন দেখা মেলেনি।

আমাদের টিম প্রথমে পশ্চিম লতিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে যাওয়ার কথা থাকলেও আমরা প্রথমে যাই কফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে। সেখানে ভোট গ্রহণ মাত্র শুরু হয়েছে। আমরা প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে দেখা করে কথা বলি। তাকে অনুরোধ করে জানিয়েছি, নির্বাচনে কোনো ধরণের অনিয়ম যেন প্রশ্রয় না দেন। তিনি আমাদের কথা দিয়েছেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হবেনা।

এরমধ্যে মোবাইলে ফোন আসে দেওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম যিনি ভোট দিতে গেছেন তার ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন নি। আমরা গিয়ে উপস্থিত হই দেওপাড়া কেন্দ্রে। সেখানে দেখি মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে খুব হইহট্টগোল। বুথের ভিতরে কথিত ছাত্রনেতা তথা চীফ বসের লোকজন ব্যালট পেপার নিয়ে টানা হেঁচড়া করছেন। তারা চেয়ারম্যান পদে তাদের পছন্দের প্রার্থীর মার্কায় সিল মারার জন্য জোর-জবরদস্তি করেন। মহিলা ভোটাররা ব্যালট টেনে নিয়ে যাওয়ার কড়া প্রতিবাদ করেন কিন্তু তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন নি। আমরা বুথে ঢুকে যখন ক্যামেরা ওপেন করলাম, তখন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা প্রথমে তাদেরকে বের করে দেয়। পরে বেলা যত বাড়তে থাকে, ততই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ভোট কাটার দল।

এদিকে দেওপাড়া কেন্দ্রের দোতলা ভবনের মহিলা বুথে ততক্ষণে ব্যালট পেপারের বই নিয়ে সিল মারা শুরু করেছেন কলেজ ছাত্রনেতা ও তার লোকজন। যার একটি ভিডিও ফুটেজ আপনারা সারাদেশে ভাইরাল হতে দেখেছেন। এসময় তারা শুধু চেয়ারম্যান পদের মার্কায়ই সিল মারেননি, সাধারণ পুরুষ মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদের মার্কায়ও সিল মারতে দেখা যায়। দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসারের নজরে বিষয়টি আনলে তিনি অল্প কিছুক্ষণের জন্য ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে সিল মারা বন্ধ করে দেন। তবে, তাদের এই সিল মারার কার্যক্রম দফায় দফায় চলতে থাকে ভোটের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

এদিকে স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্রার্থী বার বার অবৈধভাবে ব্যালটপেপারে সিল মারার প্রতিবাদ করেন। এসময় কয়েকদফায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে চীফ বস ও তার লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় আমার টিমে থাকা সদস্যরা তাদের গোপন ক্যামেরায় অনেকগুলো অনিয়মের দৃশ্য ধারণ করেন। এসময় খবর পেয়ে ওই কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা সেখানে যান এবং নির্বাচনের অনিয়ম তারা বন্ধ করে দেন। সেখানে বিজিবি সদস্যরা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ মিনিট অপেক্ষা করেন। যার কারণে, দীর্ঘসময় ওই কেন্দ্রে আর কোনো অনিয়ম করতে পারেননি কেউ। পরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের দল চলে গেলে পুনরায় শুরু হয় ভোট কাটার প্রক্রিয়া। এসময় স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্রার্থীর সাথে দোতলায় মহিলা বুথের বারান্দায় চীফ বসের সাথে দস্তাদস্তি হয়। পরে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী অসহায় হয়ে বেলা ২টার দিকে ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। এসময় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থী নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদ করে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।

বেলা ১১টার দিকে আমি মোবাইলে প্রশাসনের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলছিলাম। উনাকে দেওপাড়া কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি জানাচ্ছি। এসময় বোরকা পরিহিত এবং মুখ ঢাকা এক মহিলা আমার পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কে? এখানে দাঁড়িয়ে কথা শুনছেন কেন? পরে জানলাম তিনি চেয়ারম্যান পদের বিশেষ প্রার্থীর ছোট বোন।

এরপর আমার দুই সহকর্মীকে দেওপাড়া কেন্দ্রে রেখে পশ্চিম লতিফপুর কেন্দ্রে যাই। কেন্দ্রের সামনে ব্যাপক লোকসমাগম। হেভিওয়েট দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থক ও নৌকার ব্যাজ পরিহিত কর্মী ছাড়া আর কারো কর্মী দেখা যায়নি। সেখানে প্রথমে আমি আমার নিজের ভোট প্রয়োগ করি। কারণ, এটা আমার নিজের ভোট কেন্দ্র। বুথের ভেতরে কাসেম নামে একজন জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারতে ভোটারদের প্রভাবিত করেন। বাইরে ভোটারদের লাইনে গিয়ে কয়েকজন প্রত্যেক নারী-পুরুষ ভোটারকে দমকাচ্ছেন চেয়ারম্যান পদে বিশেষ প্রার্থীর মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পরই দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এরআগে বিজিবি সদস্যরা একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে লতিফপুর কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। তারাও ওই কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের খবর পান। পরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কেন্দ্রের বুথে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন।

দুপুর ১২টার পরে আমরা উত্তরপূর্ব পাঁচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে খোদ ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিনকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় নৌকার সমর্থক এম তারেকসহ তার লোকজন। এসময় বুথে ঢুকে দেখি বোরকা পরিহিত এক মহিলাসহ এম তারেক ও আরো কয়েকজন গোপনকক্ষে ডুকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারেন। পরে তাদেরকে আমি এভাবে গোপনকক্ষে ডুকার আইন আছে কীনা জানতে চাইলে তারা বের হয়ে যায়। কিন্তু বোরকা পরা ওই মহিলা বার বারই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং আমাকে কাজে বাঁধা সৃষ্টি করেন। তিনি নৌকার প্রার্থীর পরিবারের এক সদস্য বলে জানা গেছে। পরে খবর পাই আমি চলে আসার পরে আবারও তারা একইভাবে কেন্দ্র দখল অব্যাহত রাখে এবং জোরপূর্বক সিল মারে।

পাঁচপাড়া-২ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘটে মজার ঘটনা। সেখানে দলীয় প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক মুরুব্বী নিজেই প্রিসাইডিং অফিসার থেকে ব্যালট বই নিয়ে সিল মারতে থাকেন। ১৯টি ব্যালটে সিল মারা শেষ হলে ঘোড়ার সমর্থকরা বাঁধা দেন। এসময় আমরাও ওই কেন্দ্রে পৌঁছাই। পরে প্রিসাইডিং অফিসার ১৯টি ব্যালট পেপার বাতিল করেন এবং ব্যালট বই জব্দ করেন। এসময় ভোট কেন্দ্রে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কিন্তু ভোট গ্রহণ ছিল খুবই ধীরগতি। পরে প্রিসাইডিং অফিসারকে দ্রুতগতিতে ভোট গ্রহণের অনুরোধ করলে তিনি ব্যবস্থা নেন। একই সময় পুলিশের একজন এএসপির নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স সেখানে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এরপর পাঁচপাড়া-২ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে দেওপাড়া কেন্দ্রে আবারো রওনা দিই। এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল আমিন ভাই আমাকে মোবাইলে জানান, তিনি ভোট বর্জন করবেন। আমি উনাকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাই। তিনি জানান, অনেক কেন্দ্র দখল করে ভোট কাটা হচ্ছে। এমন অবস্থায় ভোট বর্জন না করে উপায় কী? আমি খুব রাগান্বিত স্বরে উনাকে বললাম এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। আপনি চুপ থাকেন, দেখা যাক কী হয়? আল্লাহ যা ভাগ্যে রাখছে, তাই হবে। এরপর তিনি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ওই সময় ভোট বর্জন করলে নির্ঘাত পরাজয় বরণ করতে হতো।

পরে দেওপাড়া কেন্দ্রে এসে দেখি বিভিন্নভাবে জোর জবরদস্তি করে নানা কলাকৌশলে মোরগ প্রতীকের মেম্বার প্রার্থীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চীফ বসের লোকজন দেদারছে ব্যালট বই নিয়ে সিল মারছেন। কিন্তু আমাদের তরুণ দুই সাংবাদিক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজে বার বারই এসব অন্যায় ও অনিয়ম ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাছান প্রহসনমূলক এই নির্বাচনের ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
এদিকে বেলা পৌঁনে ৩টার দিকে আমরা যখন দেওপাড়া কেন্দ্র ছেড়ে হযরত দেওয়ানশাহ কেন্দ্রে যাই। তখন সেখানে গিয়ে দেখি ফুটবল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থীর লোকজনের সাথে মিলে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন এক হয়ে মারমুখি অবস্থায় কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন মুর্হুমুহু ককটেলের বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পরে আমরাসহ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কঠোর ভূমিকার কারণে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি তারা। এরআগে জানা যায়, দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হযরত দেওয়ানশাহ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে তিনি সেই কেন্দ্রে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারেননি।

শেষ বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার পনর/বিশ মিনিট আগে কফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যক্তিকে মেম্বার বানানোর উদ্দেশ্যে কথিত ছাত্রনেতা চীফ বস ও নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তারা নিশ্চিত ছিলেন নৌকা জিতে গেছে। তাই এখন বিশেষ ব্যক্তিকে মেম্বার নির্বাচিত করতে হবে। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে সেখান থেকে বিড়ালের মত তারা বের হয়ে যান। শেষ মেষ বেলা ৫টা থেকে খবর আসতে থাকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের মাধ্যমে ঘোড়ার প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে ঘোড়ার প্রার্থী পরাজয় ভেবে তিনি বাড়িতে চলে যান। নির্বাচনে জেতার আশাও ছেড়ে দেন। পরে উনাকে বাড়ি থেকে খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয়। এদিকে ঘোড়ার প্রার্থী এগিয়ে থাকার খবরে নড়েচড়ে বসেন নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন। শুরু হয় বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া। উদ্দেশ্য, লক্ষ্মীপুর থেকে ফলাফল সিট পরিবর্তন করে নিজেদের পক্ষে ফলাফল ঘোষণার ম্যাকানিজম। কিন্তু, জনগণের প্রতিরোধ ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই চেষ্টাও বিফলে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত ঘোড়া প্রতীকের বিজয় হয়। এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে জেলার বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি, সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিক এবং ঢাকা থেকে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির ফোনালাপের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করার কারণে ঘোড়া প্রতীকের বিজয় তারা ঠেকাতে পারেননি।

গল্পের সারমর্ম :
নৌকার পরাজয়ের অন্যতম কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

১। দলীয় প্রতীক পাওয়ার পরই ঢাকা থেকে বিতর্কিত এক ছাত্রনেতার কাঁধে ভর করে নির্বাচনী এলাকায় আগমন এবং তাকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

২। বিতর্কিত ছাত্রনেতা নৌকার বিজয়ের চেয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থীদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদেরকে বিজয়ী করার উপর বেশি জোর দিয়েছেন এবং ভোটের দিন নৌকার বিজয়ের লক্ষ্যে তারা যেভাবে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল দিয়েছেন। এতে নৌকার পক্ষে বেশি ভোট কাটার চেয়ে মেম্বার প্রার্থীর পক্ষে বেশি কাজ করেছেন। যার কারণে ভোট কাটার পরও আশানুরুপ ভোটের হিসাব মিলেনি নৌকার পক্ষে।

৩। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটের আগেরদিন বিতর্কিত ওই ছাত্রনেতার হুমকি ধমকি সাধারণ ভোটারদের ক্ষুব্ধ করেছে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে।

৪। নৌকার প্রার্থী ও তার প্রধান সমন্বয়ের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে লাগামহীন ও উশৃঙ্খল কথাবার্তা জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে।

৫। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী সভায় নৌকার প্রার্থী বলেছেন, আমি চেয়ারম্যান হলে আপনারা দুইজন চেয়ারম্যান পাবেন। এটা তিনি তার পিতাকে বুঝিয়েছেন, কিন্তু জনগণ বুঝেছে বিতর্কিত ওই ছাত্রনেতার কথা বলেছেন।

৬। নৌকার প্রার্থীর বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অনেক সিনিয়র নেতা বা কর্মী ভোটের দিন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি, তাদের অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে সুবিধা নিয়ে দায়সারা কাজ করেছেন।

৭। বিদ্রোহী প্রার্থীর সরলতা, বিগত সময়ে রাজনীতির কারণে তার অর্থনৈতিক লোকসান এবং একবছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে জনগণকে আপন করে নেওয়ার কারণে তার প্রতি মানুষের আবেগ ভালোবাসা দারুণভাবে কাজ করেছে।

৮। বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাল্পনিক কথাবার্তা, তির্যক মন্তব্য জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে।

৯। বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট দিপু ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে নৌকার প্রার্থীর লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। কারণ, এই দুই প্রার্থীর লোকজন নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

১০। নৌকার প্রার্থী জিতলে ভোটের পরে এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং বিতর্কিত ছাত্রনেতার দাপট বেশি থাকবে, এই আশঙ্কায় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রয়োগ করেছেন।

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

মার্চ ২০২৩
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১