রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ ইং ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম স্বামীর যোগসাজশেই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণ

আকাশবার্তা ডেস্ক :

রাজধানীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী যুগ্ম কমিশনারকে (৪৯) অপহরণের পর নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান আসামি মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গাজিপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় শনিবার (২৬ আগস্ট) ভোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, অপহরণ মামলার প্রধান আসামী মো. মাসুম ওরফে মাসুদকে (৪২) এবং বাকিব দুজন হলেন- মো. আব্দুল জলিল ওরফে পনু ও মো. হাফিজ ওরফে শাহনি।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত সুত্র বলছে, গ্রেপ্তার চালক মাসুদকে কাজে ঢোকার ২০ দিনের মাথায় চাকরিচ্যুত করায় নারী কর্মকর্তা মাসুমা খাতুনের ওপর ক্ষোভ ছিল তার। এ নিয়ে নারী কর্মকর্তার প্রথম স্বামী হারুন অর রশীদের সংঙ্গে আলোচনা হলে তিনিও চালকের কাছে তার স্ত্রীর ২য় বিয়ে করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, প্রথম স্বামী ওই নারী কর্মকর্তার নামে কর্মস্থলে অভিযোগ দিয়েছিলেন যে, তাকে তালাক না দিয়েই কথিত দ্বিতীয় স্বামী নিয়ে বসবাস করছিলেন তার স্ত্রী।

এ থেকেই সাবেক সরকারী কর্মকর্তা প্রথম স্বামী নারী কর্মকর্তা স্ত্রীকে উচিত শিক্ষা দিতে মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায় এবং ৭০ হাজার টাকা দেয়। এরই সুত্র ধরে অপহরণ কাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

এনবিআর আয়কর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণ মামলার প্রধান আসামী মাসুদসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৭ আগস্ট রাত সোয়া ৮টার দিকে এনবিআর এর একজন নারী যুগ্ন কর কমিশনার রাজধানীর মগবাজার এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে অপহরণের ১৮ ঘন্টা পর ১৮ আগস্ট রাজধানীর মাদারটেক এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট মামলা হলে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মুল অভিযুক্ত চালক মাসুদসহ কয়েকজন অধরা র‍য়ে যায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে সদরদপ্তর, র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৩ এর সহায়তায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।

র‍্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানায় ও ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী থেকে পাওয়া ৭০ হাজার টাকা সবাইকে ভাগ করে দেয়। তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়ি চালক থেকে জেনে মাসুদকে জানায়।পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৭ আগস্ট রাতে তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অবস্থান নেয়।

ভুক্তভোগী রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলী রোড এলাকায় পৌছালে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিক্সা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় ভুক্তভোগীর ড্রাইভার মোটরসাইকেল ও রিক্সা সড়ানোর জন্য নামলে তাকে মারধর করে এবং গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময় গ্রেপ্তারকৃত পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে ভুক্তভোগীকে জোড়পূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে গমন করে এবং অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানায়।

তখন ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানা বলে দেয় এবং ভুক্তভোগীকে সেখানে নিয়ে যেতে বলে।

কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা ওই বাসার মেইন গেইট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ১২টার দিকে কাঁচপুর এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করে।

পরবর্তীতে তাকে ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় গমন করে এবং জুমার নামায পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাযের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন।

পরবর্তীতে দুপুরে খাবার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যায় এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাহিরে পাহাড়ায় থাকে। এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, অপহরণ হওয়া নারীর প্রথম স্বামী বিষয়ে আজ সকালেই আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় যেহুতু মামলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানাবো। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১