শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খামারিদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

আকাশবার্তা ডেস্ক :

  • ওয়েবসাইট বা পেজ  খুলে পশু বিক্রির নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসনের
  • পশুর হাট না বসলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
  • করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনসমাগম থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানির গরু ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ রাষ্ট্রের জন্য  সরকারের জন্য বড় সহায়ক —শ ম রেজাউল করিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

করোনা পরিস্থিতি আর চলমান লকডাউনে কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা। যদিও সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন খামারিদের অনলাইনে পশু কেনাবেচার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে অনেকেই অনলাইন বুঝেনও না। তাই এ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পশু কতটা বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবার কোরবানির পশু তারা সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

আমাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি আর চলমান লকডাউনে কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ময়মনসিংহের খামারিরা। ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে তাদের আশঙ্কা ততই বাড়ছে। লাভের আশা দূরে থাক, এবার বাজারে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসল তুলতে পারবেন কিনা- সেটাই এখন খামারিদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ দিকে করোনার বিস্তার রোধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার আহ্বান জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার জেলাপর্যায়ে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস পর্যায়েও ফেসবুক পেজে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম জানান, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। জিনিয়া সফটওয়্যার প্রোভাইডারের কারিগরি সহযোগিতায় এই ওয়েবসাইটটিতে উপজেলাভিত্তিক খামারির মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ও কোরবানির পশুর ছবিসহ বিবরণ এবং গরু, ছাগল ও মহিষের সম্ভাব্য দাম (প্রতি কেজি) দেয়া থাকবে। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দরদাম করে পশু কিনতে পারবেন। বিক্রেতার সক্ষমতা অনুযায়ী গরু ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ারও সুযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, খামারি, চাষি, মওসুমি ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। করোনার কারণে এবার অনেক পশু অবিক্রিত থাকতে পারে বলে খামারি ও কৃষকরা আশঙ্কা করছেন। সে ক্ষেত্রে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খোরশিদ দেলোয়ার জানান, কেন্দুয়া উপজেলা ছাগল-ভেড়াসহ ১৩ হাজার ৩৩৪টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত। ১ হাজার খামারি তাদের গরু মোটাতাজাকরণ করে উপযুক্ত করেছেন। ঈদ প্রায় এগিয়ে এলেও এখনো বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি। কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মইনউদ্দিন খন্দকার জানান, উপজেলায় ইজারাকৃত ২৫টি হাট-বাজার রয়েছে। এগুলোতে পশু বেচাকেনাও হয়; কিন্তু করোনার কারণে পশুর হাটগুলো বন্ধ রয়েছে। আগামী ১৪ জুলাইয়ের পর পশুর হাটের অনুমতি দিতে পারে সরকার। তবে অনলাইনে বেচাকেনা করতে পারেন মালিকরা।

বাউফলে করোনায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পটুয়াখালী বাউফলের ৬০০ গরু খামারি। খামারিরা এক বছর ধরে এসব খামারে গরু লালন পালন করে আসছেন পবিত্র ঈদুল আজহায় বেশি দামে বিক্রির জন্য। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে গরু বিক্রি করা নিয়ে সকল খামারি পড়েছেন চরম বিপাকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় অধিকাংশ গ্রামে ছোট, বড় এবং মাঝারি মিলে প্রায় ৬০০ গরুর খামারে প্রায়  আড়াই হাজার পশু আছে। এ সব খামারে বছরের পুরো সময়জুড়ে কম বেশি গরু লালন পালন করলেও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে খামারিরা বেশি গরু লালন পালন করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গরুর খামার তৈরি হয়েছে। প্রতিটি খামারে ২ থেকে ৪০টি পর্যন্ত গরু পালন করা হয়েছে। গরু পালন অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এ জনপদের মানুষ দিন দিন গরুর খামারে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। রংপুরের কাউনিয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মুনাফা লাভের আশা দেখলেও লকডাউনের কারণে মাথায় হাত পড়েছে গরু খামারিদের। ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে খামারিদের। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরেও ব্যবসা করতে পারেননি স্থানীয় গরু খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এ বছরেও একই অবস্থা হয়, তাহলে পথে নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭৭৬টি দুগ্ধ খামার আছে। আর এসব খামারে গড়ে প্রায় ছয় হাজার ২০০টি গরু আছে। যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬১ টন দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব খামারিরা জানান, কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারো গরু প্রস্তুত করেছেন তারা। তবে এবার করোনার ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কাউনিয়া উপজেলার প্রধান দুটি পশুর হাট টেপামধুপুর এবং খানাসামার হাট এরই মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুরুতে একটু আশার বাণী থাকলেও নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধের সময় বৃদ্ধি করায় শেষ পর্যন্ত কোরবানির পশু বিক্রির অবস্থা কী দাঁড়ায় তা নিয়ে খামারিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার বলেন, করোনার কারণে উপজেলার খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে কোরবানির হাট নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। এই পেজে খামারিরা গরুর ছবি ও দাম লিখে দিয়ে তাদের গরু বিক্রি করতে পারবেন। আমরা সার্বক্ষণিক গরুর খামারিদের খামারে গিয়ে গরু পালনের বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করছি। নাটোরের সিংড়ায় কোরবানির গরু বিক্রয় নিয়ে খামারিরা আছেন শঙ্কায় আর দুশ্চিন্তায় ক্রেতারা। চলমান লকডাউনের কারণেই এই শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর সিংড়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে খামার ও পারিবারিকভাবে প্রায় ৪০ হাজার গরু লালন পালন করা হয়েছে। যা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিক্রয় করা হবে। তবে চলমান লকডাউনের কারণে সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা এই শঙ্কা করছেন গরুর মালিক ও খামারিরা।

খামারিরা জানান, প্রতিবছর ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই ঢাকার ব্যবসায়ীরা খামার ও গরু মালিকের বাড়ি বাড়ি এসে দাম দর করে গরু কিনেন। এ বছর সেই কেনাবেচা নাই। ঢাকার কোনো ব্যবসায়ীরাই এখন পর্যন্ত আসে নাই। তাছাড়া অনেকে ঢাকাসহ বড় বড় কোরবানির হাটে গরু নিয়ে যান, কিন্তু এবার সে সুযোগ নাই। এ এলাকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশেদ আলম বলেন, আমরা প্রায় ১০ দিন আগে খামারিদের গরুর ছবি, নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে সিংড়া অনলাইন কোরবানির পশুর হাট নামে ফেসবুক গ্রুপে গরু বেচাকেনার ব্যবস্থা শুরু করেছি। ইচ্ছে করলে যে কোনো ক্রেতা বিক্রেতা এখানে চাহিদামতো কেনাবেচা করতে পারবেন। আরও গ্রুপ খুলে প্রচারণা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাট বসতে পারে। সেসব হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা থাকবে। কাজেই কোরবানির গরু কেনাবেচা নিয়ে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।

কুমিল্লার মুরাদনগরের ৩ হাজার ৩২ খামারির উদ্যোক্তারা। এবার মুরাদনগরে প্রায় ৭ লাখ মানুষের গরুর চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০। বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে ১৩ হাজার ৮৭১টি গরু। উদ্যোক্তারা মনে করেন, কোরবানির পশুর হাট না বসলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে না। এতে অনেক লোকসান গুনতে হবে। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। করোনার প্রকোপ না কমলে কোরবানির হাটে তেমন বেপারী আসবেন না। কুমিল্লা জেলায় অনলাইন পশুর হাট থাকলেও মুরাদনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল আহমেদ খান নিজ উদ্যোগে ‘মুরাদনগর অনলাইন পশুর হাট’ নামে ফেসবুক পেজ খুলেছেন। মুরাদনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল আহমেদ খান জানান, চলতি বছরে করোনার আতঙ্কে হাটে গরু বিক্রি ও দাম নিয়ে চিন্তিত খামারিরা। আমরা ইউনিয়ন উদ্যোক্তদের নিয়ে ‘মুরাদনগর অনলাইন পশুর হাট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছি। খামারিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আগ্রহী খামারি থেকে গবাদি প্রাণীর ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। তা অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির জন্য প্রচার করা হবে। এবার গরুর চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০। বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা আছে ১৩ হাজার ৮৭১টি গরু। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছোট-বড় অসংখ্য খামারি। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় এবং ঈদের আগে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছেন খামারিরা। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম খান জানান, এবার করোনার কারণে পশু লালন-পালন কিছুটা কমে গেলেও ভৈরবে ছোট-বড় প্রায় ৩ হাজার খামারে ১০ হাজার কোরবানির পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও আশপাশের জেলা-উপজেলায় এখানকার কোরবানির পশু সরবরাহ করা যাবে। তাছাড়া গত বছর করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। এবারো ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরি করে তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জীবন বাঁচানোর প্রশ্নে এই ক্ষতিটা মেনে নিতে হবে। কৃষক ও খামারিদের যেন বড় ক্ষতি না হয় সে জন্য সাপ্লাই চেইন মসৃণ করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনসমাগম থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানির গরু ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য বড় সহায়ক। চরাঞ্চলের গরুর অনলাইন হাট শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার জন্যই নয়, এটি রাষ্ট্রের সুবিধার জন্য। মন্ত্রী আরও যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কারণে চরাঞ্চলের খামারিরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হতে পারছেন। চরাঞ্চলের মানুষদের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানারকম সমস্যার মধ্যে থেকে জীবন ও জীবিকা নিয়ে লড়াই করতে হয়। তাদের উৎপাদিত প্রাণিসম্পদ যাতে যথাযথ মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং তারা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় রাষ্ট্রের জন্য সহায়ক বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০