শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেবে না ইরান লক্ষ্মীপুরে সজীবের জানাজায় মানুষের ঢল, সংসদ সদস্য পিঙ্কুর কান্না সজীব হত্যায় উত্তাল চন্দ্রগঞ্জে সড়ক অবরোধ, খুনিদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম ৪ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ : লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩ মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুরে ৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ভিয়েতনামে ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় ধনকুবেরের ফাঁসি ইরানকে থামাতে তুরস্ককে অনুরোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বিশ্ববাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ফিলিস্তিনিদের পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড

৫০ লাখ মামলাজটের আশঙ্কা!

আকাশবার্তা ডেস্ক :

*মেরিটবিহীন আবেদন খারিজে কমবে জট
*উচ্চ আদালতে বিচারক বাড়ানোর তাগিদ
*ভার্চুয়াল আদালতের জোরালো দাবি আইনজীবীদের
*বিচারকদের অবকাশ কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
*বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করে তুচ্ছ বিষয়ে মামলা আটকাতে হবে: ব্যারিষ্টার শফিক আহম্মেদ

দালানকোঠা কম। নেই বিচারকদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা। মামলা ভারে ফাইল রাখার জায়গাও সংকুলান। আছে বিচারকেরও সঙ্কট। যারা আছে তাদেরও কর্মদিবস চলে এজলাস ভাগাভাগি করে।

অধিকাংশেরই আবার গাড়িও নেই। বিচারকদের সহায়তার লোকবলও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। মূলত এসব আনুষঙ্গিক সমস্যার কারণেই অধস্তন আদালতের বিচারকেরা মামলার ভারে জর্জরিত।

শুধু নিম্ন আদালতই নয় মামলার পাহাড় জমেছে উচ্চ আদালতেও। মামলা দায়েরের চেয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার কমেই চলছে। আর এতেই সৃষ্টি হচ্ছে মামলার মহাজট।

বর্তমানে উচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। এসব মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিচার বিভাগ। মামলাজট কমাতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কোনো উদ্যোগেই মামলার জট কমছে না। দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিচারবিভাগের এই বেহাল দশার মধ্যেই আবার জেকে বসেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত হওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাসটি মোকাবেলায় প্রায় এক মাসের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে আদালত পাড়া। কিন্তু বিচারঙ্গন বন্ধ থাকলেও থেমে নেই অপরাধ। প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটছে নানা ধরনের ফৌজদারি অপরাধ।

মামলাও হচ্ছে নিয়মিতভাবেই। দিনদিন ভারি হচ্ছে মামলার পাল্লা। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকায় ধমকে আছে বিচারকাজ। করোনায় মামলা জট কমাতে অনলাইনে আদালত পরিচালনার দাবি উঠলেও আপাতত সে দিকেও হাটছে না সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কবে নাগাত স্বাভাবিক হবে সেটারও নেই কোনো নিশ্চয়তা। ফলে মামলাজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বিচারসংশ্লিষ্টরা।

৩৭ লাখ থেকে ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফলে বর্তমান সংকটে সীমিত পরিসরে হলেও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জরুরি মামলার বিচারকাজ পরিচালনা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাৎসরিক অবকাশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেহেতু অপরাধ থেমে নেই আর মামলাও থেমে নেই। শুধু বিচারকাজ থেমে আছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে বর্তমান ৩৭ লাখের সাথে আরো ১৩ লাখ যোগ হতে সময় লাগবে না। এতে প্রায় ৫০ লাখ মামলার জট সৃস্টি হবে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

তখন আরো ভয়ংকর অবস্থায় পড়তে হবে বিচারবিভাগকে। ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করলে জট কিছুটা কমিয়ে রাখা যেতো। ৫০ লাখ মামলা জট সৃষ্টি থেকে বাঁচতে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে অভিন্ন উদ্যেগ নিতে হবে বলেও মত দেন বিশ্লেষকেরা।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতিগণ গড়ে প্রায় ১৫ জন অধস্তন আদালতের বিচারকের কার্যক্রম তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এই তদারকটা পূর্ণমাত্রায় ক্রিয়াশীল হলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। কমবে মামলা জটও এমনটিই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সময় উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার। ওই সময় উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল ৮১ জন। বর্তমানে উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৯৭ জন। মামলার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে আরও বিচারপতি বাড়ানোর মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা অনেক কম। ফলে মামলাজট বাড়ছে, বিচার নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে, পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে দুর্ভোগ কমছে না।

সুপ্রিমকোর্ট সুত্রে জানা যায়, সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে সর্বমোট ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৮৫টি মামলা বিচারাধীন। এরমধ্যে আপীল বিভাগের ৬ জন বিচারপতির হাতে মামলা আছে ২৩ হাজার ৬১৭ টি।

অপরদিকে, হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে ৯৭ জন বিচারপতি আছেন। এসব বিচারপতিদের হাতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি। সারাদেশের অধস্তন আদালতে সক্রিয় বিচারক আছেন ১ হাজার ৫৪৭ জন। তাদের হাতে বিচারাধিন মামলা আছে ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৪৩টি।

এরমধ্যে গত এক বছরে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ গত এক বছরে প্রায় ২২ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।

শুধু এই বেঞ্চই নয় সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ তাদের মামলা নিষ্পত্তির হার অনেকাংশেই বেশি। এর মধ্যে রয়েছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমসহ আরও কয়েকটি বেঞ্চ রয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে প্রায় ৩৭ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে ২৩ হাজার ৬১৭, হাইকোর্ট বিভাগে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি এবং অধস্তন আদালতে ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

করোনায় মামলা জট কেমন হবে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, করোনার কারণে মামলা জট আরো বাড়বে এটা স্বাভাবিক। কারণ যেহেতু আদালত বন্ধ রয়েছে কিন্তু মামলা চলছেই এটাই বড় কারণ। বিচারকাজ বন্ধ থাকলে ১৩ লাখ মামলা জমতে মাত্র ২ মাস সময় লাগবে।

মূলত মামলাজট শুরু হয় নিম্ন আদালত থেকে। কিন্তু এ জট কমাতে আগে থেকেই সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন করোনার কারণে অপরাধ, গ্রেপ্তার, মামলাও হচ্ছ। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন মামলার সঙ্গে পুরনো মামলা যুক্ত হয়ে জট আরও বাড়বে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব পড়বে।

কিন্তু এখন থেকে পরিকল্পনা নিয়ে নিম্ন আদালতের কর্মঘণ্টা বাড়ানো, হাইকোর্টের সব বেঞ্চে রিট আবেদন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার শুনানির এখতিয়ার, বাৎসরিক অবকাশ কমানো গেলে কিছুটা হলেও জট কমানো সম্ভব হবে।

পাশাপাশি কঠিন হলেও এখনই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে জরুরি মামলাগুলোর শুনানি করা গেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিনউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হচ্ছে, এটা সত্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মামলা নিষ্পত্তিই হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এজন্য মামলাজট কমাতে উচ্চ এবং অধস্তন আদালতের অবকাশ কমিয়ে ও কর্মঘণ্টা বাড়ানো যেতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি একান্ত প্রয়োজন। এতে তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। মামলা ফাইল হলে এটা মীমাংসা করা যায়। পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে। ক্রিমিনাল মামলাও এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। এ ব্যবস্থা না হলে বিচার ব্যবস্থা ধস নামবে। জনগণ দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার পাচ্ছে না। এডিআরের ফলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মামলা করার প্রবণতা দূর হবে।

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০