আকাশবার্তা ডেস্ক :
ডানা না থাকলেও নাম তার পরী। একসময় মিডিয়া পাড়ায় ততটা গুরুত্ত্ব না থাকলেও নানান অপকর্মের মধ্যদিয়ে আলোচনা সমালোচনার পর তিনি এখন মিডিয়া পাড়ায় আলোচনার প্রধান খোরাক। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ নয় এমন মানুষ পাওয়া বিরল। যদিও এই অভিনেত্রীর অভিনয় প্রতিভার থেকে তার সৌন্দর্য ও বিতর্কের খ্যাতি বহুদূর বিস্তৃত।
কখনও ধর্ষণের চেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন। কখনও সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা ‘সম্বোধন’ করে চিঠি, কখনও আবার মাদক যোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার। কখনও আবার ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলি গসিপ কলাম ভরানোর মূল উপাত্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারারুদ্ধ ছিলেন প্রায় ১ মাস। তবে কখনও তাকে দমতে দেখা যায়নি। বরং যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরী।
একমাস টানা জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে হুড খোলা গাড়িতে চেপে শোভাযাত্রা করে বাড়ি গিয়েছিলেন পরী। হাতের মেহেদিতে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ এর মতো বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন।
এর পরেও হাতের তালুতে অশ্লীল ছবি এঁকে তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন ‘…মি মোর’ শব্দদুটি। প্রথমদিকে বিষয়টি অনেকেই বুঝতে পারেননি। তবে পরে বিষয়টি নজরে আসায় অনেকেই চমকে উঠেছেন।
এখানেই শেষ নয়, গত ২৪ অক্টোবর পাঁচতারকা হোটেলে জাঁকজমকভাবে নিজের জন্মদিন পালন করেন আলোচিত এই অভিনেত্রী। জন্মদিনের উদযাপন মঞ্চ বিমানের ককপিটের আদলে সাজানো হয়। লাল আর সাদা রঙকে প্রাধান্য দিয়ে হোটেলের সাজসজ্জা চোখ ধাঁধানো। শোবিজ সংশ্লিষ্ট অনেকেই সেখানে হাজির হন। সবার চোখে-মুখেও ছিল উচ্ছ্বল হাসি আর আনন্দ।
পরীর পরনে ছিল লাল রঙের শার্ট, মাথায় লাল-সাদার সমন্বয়ে টুপি; এ ছাড়া নিম্নাংশ আবৃত করেছেন সাদা রঙের একটি কাপড়ে, যেটা অনেকটা লুঙ্গির মতো দেখতে। কাছা দেয়ার ভঙ্গিমায় সেটা পরেছেন তিনি।
পরীমনি আগেই জানিয়েছিলেন, তার এবারের জন্মদিনে থাকবেন প্রকৃত কাছের মানুষেরা। সেই কাছের মানুষের তালিকায় ছিলেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, তার নানা শামসুল হক গাজী এবং বিভিন্ন সংবাদকর্মীরা। সবাইকে নিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাসে জন্মদিন উদযাপন করেছেন নায়িকা। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে অতিথিদের সঙ্গে পরীমনির কেক মাখামাখিও হয়।
কিন্তু পরীর এই লাল সাদা জমকালো আয়োজনে পরীর চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি এবং তাদের কাজের ধরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পরীর চাহিদা অনুযায়ী পোশাক পরিধান করে পরীর কাছে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সাংবাদিকদের মুখে কিংবা শরীরে কেক মেখে দেওয়া আবার কখনো বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া সব কিছুই হয়েছে কিছু গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে।
সাংবাদিকদের সাথে পরীমনির এমন আচারণে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অশ্লিল নৃত্য এবং ভঙ্গীমার কারণে অনেক সাংবাদিকই দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক যুগান্তরের প্রধান বিনোদন প্রতিবেদক এফ আই দীপু তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, অফিসে বইস্যা কাজ করতেছি। ‘শেষ দুপুরে সেই ছোট ভাই ফোন দিয়া খুব আগ্রহ নিয়া জানতে চাইলো- ভাই, সামনে তো আপনার জন্মদিন। আয়োজন টায়োজন কিছু করবেন? করলে অতিথিদের জন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া আছে নাকি? আমি কইলাম- আছে মানে! বিশাল আয়োজন আছে। লিস্ট করে এখনই দাওয়াত দিয়া দে। ড্রেস কোড বলে দিবি, সবাইকে ডায়পার পইরা আসতে হবে? ছোট ভাই অবাক হয়ে জানতে চাইলো- ডায়পার কেন ভাই? অতিথিদের হাগুমুতু করে দেয়ার সম্ভাবনা আছে নাকি? আমি কইলাম- আরে গাধা, সবাই যদি আমার মতো মাঞ্জা মাইরা অনুষ্ঠানে এটেন্ড করে, তাইলে আমার আর তাদের মধ্যে তফাৎ কী? অনেকগুলা ডায়পার পরা বোকাসোদার মাঝে আমিই একমাত্র ভদ্দরলোক। মজা না! ভাইবা দ্যাখ, ডায়পারের আরও একটা সুবিধা আছে। আগে থেকে মাল টাল খেয়ে আসলে সেটা হঠাৎ ত্যাগ করে দিলেও প্রবলেম হবে না।
লাইন কাটার আগে ছোটভাই জানতে চাইলো- ভাই, সেদিন আমারও কী ডায়পার পইরা যাইতে হবে?
আমি কইলাম- না থাক, তুই একটা হাফ পেন্ট পরিস। শুনেই খুশীতে গদগদ হয়ে কইল- ভাই, তাইলে এখন ধেকেই দাওয়াত দেয়া শুরু করি।
মোহনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মাইনুল হোসেন পিন্নু লিখেছেন, ‘এ ইস্যুতে আপনাদের টিআরপি কমবে খুব তাড়াতাড়ি, কারণ সমাজ এতোটা অসুস্থ হয়নি এখনো।’
জাগোনিউজের সাংবাদিক হাসিবুর রহমান লিখেছেন, ‘আজ (২৪ অক্টোবর) এই ঢালিউড সুপার ওমেনের জন্মদিন’- একটি পত্রিকা গতকাল লিখেছিল এটি, চেখে পড়ল আজ। একজন মানুষ কী কী করলে তাকে সুপার ম্যান বা সুপার ওমেন বলা যায়? উপমাগুলোকে হাস্যকরভাবে নষ্ট করে মিডিয়ার লাভ কোথায়?
আরটিভি’র সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন সাগর লিখেছেন, ‘বান্দরকে লায় (প্রশ্রয়) দিলে মান্দার গাছে উঠে পরীমনিই তার প্রমাণ টিআরপির কাছে আমাদের রুচির এতটা অধপতন হবে কে জানতো!?’
দৈনিক আমার সংবাদের সাংবাদিক ইসরাফিল ফরাজী লিখেছেন, ‘মাফ করবেন!একজন ব্যাবসায়ীর জন্মদিনে তার পাশে নির্লজ্জ সংবাদ মাধ্যমেরকর্মীদের বেহায়াপনা দেখে মনে হলো এরা সমাজের আয়না না, এরাই সমাজকে অন্ধকারের ভিতরে রাখছে। এদের জন্যই ওই মিডিয়া পাড়ায় ব্যাবসায়ীদের জন্ম হয়। ব্যাবসায়ী বললো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সবাই সাদা পরে আসবেন সাংবাদিকেরাও সবাই সাদা পরে গেলো! আহ কতটা নির্লজ্জ এরা?’
দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের সাংবাদিক এসএম শামিম লিখেছেন, দেশের একমাত্র নায়িকা! যার ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সারাদিনের সকল খবর প্রকাশ করতে বিনোদন সাংবাদিকরা মরিয়া! সে আমাদের Pori Moni
রাহাদ আহমদ লিখেছেন, ‘বিপদে ছিলেনা পাশে, জুতো অবশেষে***। পরীমনি জুতো হাতে নিয়ে লুঙ্গি কাছা দিয়ে নেচে বুঝিয়ে দিলো। তোরা আমার বিপদে কেউ পাশে থাকোস নাই। দাওয়াত দিয়ে জুতো নিয়ে নেচে বুঝিয়ে দিলাম। আমি ভুলিনি সেদিনের কথা!!’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন কাজকে অনেকেই অসুস্থ সমাজের সঙ্গেই তুলনা করছেন।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন পরীমনি ও তার দুই সহযোগী।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে পরীমনি অভিযোগ করেন। ঘটনার চার দিন পর ১৩ জুন রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এবং রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনা প্রকাশ করেন নায়িকা পরীমনি।
পর দিন ১৪ জুন সকালে ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি। ওই দিন বিকালে উত্তরা থেকে নাসির ও অমিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এর পর ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।
ওই মামলায় গত ১৫ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি নাসির ও অমির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ওই মামলায় রিমান্ড শেষে পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের।
২৯ জুন পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি জামিন পান।পরে ৩০ জুন দিবাগত রাত ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নাসির মুক্তি পান।
এদিকে বোট ক্লাবে পরীমনির ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিবির এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সাথে পরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে যা প্রামাণিত। পরীমনির সঙ্গে ১৮ ঘণ্টা বাসায় সময় কাটানোর অভিযোগ উঠায় ডিবির সব কার্যক্রম থেকে সাকলায়েনকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরীমনিকাণ্ডে সমালোচিত হয়েছেন বিচারক ও আইনজীবীরা।