বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ ইং ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদের অজানা অংশে যেভাবে পৌছাল ভারত

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক :

২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর। ওইদিন ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-১ যাত্রা শুরু করেছিল চাঁদের উদ্দেশে।

পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে মহাকাশযান পাঠাতে নিজেদের প্রস্তুতির জানান দিতে এই অভিযান পরিচালনা করে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো।

চাঁদের অজানা অনেক তথ্য বিশ্বের বুকে পাঠিয়ে দেয় চন্দ্রযান-১। ভারতের এই মহাকাশযান চাঁদে পানির অস্তিত্ব প্রথম খুঁজে পেয়ে ইতিহাস গড়ে। এরপর প্রায় কেটে গেছে ১৫ বছর।

বুধবার (২৩ আগস্ট ২০২৩) ভারতের আরেক মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদের রহস্যে ঘেরা অজানা দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়েছে। ভারতের এই মাইলফলক চন্দ্রযান-২ অবতরণের প্রচেষ্টার সময় বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় চার বছর পর এসেছে।

বুধবার চাঁদের পৃষ্ঠে অভিকর্ষ আর গতির কৌশলী নৃত্যের মাধ্যমে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমকে অবতরণ করেছে ইসরোর বিজ্ঞানীরা। বিক্রম তার গন্তব্যস্থলের প্রায় ২৫ কিলোমিটার ওপর থেকে ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫ টা ৪৫ মিনিটের দিকে অবতরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করে। এর পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের অস্পৃশ্য দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়েছে চন্দ্রযান-৩।

৫ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করার পর ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে চাঁদের চারপাশে ঘুরছিল। পৃথিবী এবং এর গন্তব্যের মাঝের প্রায় ৪ লাখ কিলোমিটার দীর্ঘপথ শেষ করে চূড়ান্ত অবতরণের পথে ছিল বিক্রম।

গত ১৪ জুলাই ভারতের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপিত এই মহাকাশযান তার যাত্রায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিল। কারণ পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে অতিরিক্ত গতি অর্জন করে মহাকাশের শূন্য বুকের মাঝ দিয়ে ছুটছিল চন্দ্রযান-৩।

চন্দ্রযান-৩ এর এই অভিযান ছিল অজানা এক চ্যালেঞ্জে ঘেরা। ভারতীয় এই মহাকাশযান চাঁদের এমন এক অঞ্চলে অবতরণ করেছে, যা এতদিন ছিল অস্পৃশ্য এবং অনাবিষ্কৃত। ভারতই প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছে।

ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ছুঁয়েছে, যেখানে দিনের বেলায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর এবং রাতে মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। চাঁদের এই প্রান্ত এতদিন ছিল অজানা। ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করা বিশ্বের প্রথম দেশ। আর সামগ্রিক অভিযানের দিক থেকে চতুর্থ। ভারতের আগে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন।

চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের অসম উচ্চতা, হাজার হাজার গভীর গর্ত আর মাটি থেকে উঠে আসা শত শত প্রতিবন্ধকতায় ভূখণ্ডটি আন্তঃগ্রহীয় অবস্থানে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ প্রচেষ্টার মাত্র কয়েকদিন আগে রাশিয়া তার পাঠানো মহাকাশযান লুনা-২৫ হারিয়েছে। ঠিক একই অঞ্চল থেকে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবতরণ করেছে বিক্রম।

চন্দ্রাভিযান কত অর্থ খরচ করল ভারত?

ভারতের চন্দ্রযান-৩ কে চাঁদে পাঠানোর এই মিশনে খরচ হয়েছে ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন রুপি (সাড়ে ৭ কোটি ডলার)। বাংলাদেশি প্রায় ৮২০ কোটি ৮০ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। যা গত রবিবার চাঁদের পৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হওয়া রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ এর পেছনে ব্যয় (২০০ মিলিয়ন ডলার) হওয়া অর্থের অর্ধেকেরও কম।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের পূর্ববর্তী চাঁদ ও মঙ্গল মিশনগুলোও অল্প খরচে পরিচালিত হয়েছে। অর্থ অপচয় রোধে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রচেষ্টাকে কৃতিত্ব দেন ভারতীয়রা।

কেন ভারতের মঙ্গল মিশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও কম খরচ হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে ব্রিটেনের মহাকাশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কোটস বিবিসিকে বলেছেন, ভারত মঙ্গল নভোযানের পেলোড ১৫ কেজিতে সীমিত রেখেছিল, যা সফল মিশনটিকে তুলনামূলক ‘ছোট’ রেখেছে।

ইসরোর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা বিবিসি তামিলকে বলেছেন, ভারতের উৎক্ষেপণ খরচ এখন আরও কম হতে পারে। কারণ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর কুলাসেকারাপট্টিনামে একটি নতুন মহাকাশবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এই ধরনের অভিযানের আদর্শ উৎক্ষেপণ অবস্থানের সেই বন্দরটি পরিবহন খরচ কমাবে।

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১