বুধবার ২২শে অক্টোবর, ২০২৫ ইং ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়নে স্থান নির্ধারনে সংশয় প্রকাশ

মানুষের মাঝে যেমন আশার আলো জেগেছে, ঠিক তেমনি দেখা দিয়েছে একটি নতুন সংশয়—চন্দ্রগঞ্জ উপজেলাভবন কোথায় হবে?
কবির আহমদ ফারুক :
চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা ভবন চন্দ্রগঞ্জেই হোক : ইতিহাস, পরিচয় ও জনস্বার্থের পক্ষের যুক্তি! চন্দ্রগঞ্জ উপজেলায় ভবন স্থাপনা : ইতিহাস, বাস্তবতা ও যৌক্তিক অবস্থান।
লক্ষ্মীপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র চন্দ্রগঞ্জ—একটি ঐতিহাসিক, শিক্ষাবান্ধব ও বাণিজ্যিক এলাকা, যার নামেই গড়ে ওঠা প্রস্তাবিত “চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা” বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির পর সরকার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলাকে অনুমোদনের কার্যক্রম শুরু করেছে—যা নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের জন্য একটি মাইলফলক। কিন্তু এ উন্নয়ন যাত্রায় বর্তমানে যে সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, তা হলো উপজেলা ভবন কোথায় হবে—এই বিতর্ক।
কেউ বলছেন, ভবন হবে বটতলীতে। কেউ বলছেন, হাজিরপাড়ায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলাকে কেন্দ্র করেই যদি উপজেলাটি গঠিত হয়, তাহলে ভবন কেন হবে চন্দ্রগঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও?
ইতিহাস বলছে—চন্দ্রগঞ্জই উপযুক্ত
১৯৭২ সালের ১ জুলাই এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় এই অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ও স্বনামধন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ।
২০১৪ সালের ২ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় চন্দ্রগঞ্জ থানা, যা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়ার মূল কেন্দ্র। আরো প্রতিষ্ঠিত আছে, চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা৷
চন্দ্রগঞ্জ বাজার বহু বছর ধরেই লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র। স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থাও চন্দ্রগঞ্জকে করে তুলেছে সহজগম্য ও জনবান্ধব একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র।
রাজনৈতিক ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপ :
যেখানে ইতিহাস, অবকাঠামো ও জনমত স্পষ্টভাবে চন্দ্রগঞ্জকেই উপজেলাভবনের জন্য উপযুক্ত ঘোষণা করছে, সেখানে কিছু প্রভাবশালী মহল নিজেদের স্বার্থে অন্য স্থানে ভবন নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এটি শুধু অন্যায় নয়, বরং জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
বাস্তবতা ও যুক্তির জয় হোক :
চন্দ্রগঞ্জ নামেই যদি উপজেলা হয়, তাহলে এর কেন্দ্রবিন্দুও চন্দ্রগঞ্জ থানা ও কলেজ এলাকায় হওয়াই যৌক্তিক ও প্রশাসনিকভাবে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত হবে। এই অঞ্চলের মানুষও চায়, উপজেলা সদর হোক সেই ঐতিহাসিক জায়গায়, যেখানে থেকে তাদের সেবা সহজে প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
চন্দ্রগঞ্জ নাম শুধু একটি এলাকার নাম নয়, এটি একটি ইতিহাস, আন্দোলন, আত্মত্যাগ ও আশার প্রতীক। সেই প্রতীকের মর্যাদা রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব—স্বচ্ছতা ও যৌক্তিকতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া। রাজনৈতিক বা ব্যক্তি স্বার্থ নয়, জনগণের প্রয়োজন এবং বাস্তবতাই হওয়া উচিত ভবন স্থাপনের একমাত্র মানদণ্ড।
চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা ভবন চন্দ্রগঞ্জেই হোক : ইতিহাস, পরিচয় ও জনস্বার্থের পক্ষের যুক্তি
লক্ষ্মীপুর জেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত চন্দ্রগঞ্জ শুধু একটি বাজার বা থানা নয়—এটি একটি ইতিহাস, একটি আন্দোলনের নাম, একটি আত্মপরিচয়ের প্রতীক। সরকারের সদিচ্ছায় বর্তমানে চন্দ্রগঞ্জকে উপজেলায় উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। এ আনন্দ সংবাদকে ঘিরে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন আশার আলো জেগেছে, ঠিক তেমনি দেখা দিয়েছে একটি নতুন সংশয়—উপজেলাভবন কোথায় হবে?
যদিও উপজেলাটির নাম চন্দ্রগঞ্জ, তবে বর্তমানে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ভবন স্থাপনের জায়গা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কেউ চায় বটতলীতে, কেউ চায় হাজিরপাড়ায়। অথচ সবচেয়ে যৌক্তিক, ইতিহাসসন্ধানী এবং জনগণের পক্ষে সঠিক অবস্থান একটাই—চন্দ্রগঞ্জ থানা ও কলেজ কেন্দ্রিক এলাকা।
ঐতিহাসিক ভিত্তি : কেন চন্দ্রগঞ্জ?
১. কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, প্রতিষ্ঠিত ১৯৭২ সালর ১ জুলাই —এ অঞ্চলেই প্রথম উচ্চশিক্ষার পথপ্রদর্শক, হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণকেন্দ্র।
২. চন্দ্রগঞ্জ থানা, প্রতিষ্ঠিত ২ জুন ২০১৪—এটি প্রশাসনিক কার্যক্রমের বিদ্যমান কেন্দ্র।
৩. আরো প্রতিষ্ঠিত আছে, চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা৷
৪. চন্দ্রগঞ্জ বাজার—লক্ষ্মীপুর জেলার বৃহত্তম বাজারগুলোর একটি, যার আর্থিক ও সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. যোগাযোগ ব্যবস্থা—ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই চন্দ্রগঞ্জ, সড়কপথে সহজগম্য।
এইসব তথ্যই প্রমাণ করে যে, চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় ইতিমধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত ভিত্তি গড়ে উঠেছে, যেখানে উপজেলা ভবন স্থাপন করলে সরকারি ব্যয় কম হবে, এবং জনগণের সেবা সহজলভ্য হবে।
জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ন্যায়ের দাবি :
এই উপজেলার জন্মের দাবিটি এসেছে চন্দ্রগঞ্জবাসীর মুখ থেকে, আন্দোলন থেকে। বহুবছর ধরে এখানকার মানুষ উপজেলা বাস্তবায়নের জন্য সভা, স্মারকলিপি ও আন্দোলন করে এসেছে। এখন যদি উপজেলা ভবন অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে সেটি হবে এই আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতি অবিচার এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।
এটি কেবল একটি প্রশাসনিক ভবনের বিষয় নয় বরং এটি হচ্ছে আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন ইতিহাস জানবে, প্রশ্ন করবে—“চন্দ্রগঞ্জ নামের উপজেলা ভবন চন্দ্রগঞ্জেই কেন হয়নি?”
ভবিষ্যতের প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব :
উপজেলাভবন শুধু এখনকার প্রয়োজন নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী একটি ভিত্তি। একবার ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তা শত বছরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতের শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী, ব্যবসায়ী—সবাইকে বারবার ছুটে যেতে হবে ভবিষ্যৎ সেই ভবনের কাছে। তাই এই ভবন হোক সেই জায়গায়, যা ইতিহাস, ভূগোল, সংযোগ ও জনচাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দলীয় স্বার্থ নয়, জনস্বার্থে হোক সিদ্ধান্ত :
চন্দ্রগঞ্জ নামকে ঘিরে যে উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তার প্রাণকেন্দ্রেই হোক উপজেলা ভবন। আমরা চাই না, রাজনৈতিক বিবেচনায়, প্রভাবশালীদের চাপে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ভুল সিদ্ধান্তের বোঝা বইতে বাধ্য হোক। সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাই—চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা ভবন হোক চন্দ্রগঞ্জেই, যেখানে ইতিহাস, সুযোগ-সুবিধা ও জনগণের চাওয়া এক জায়গায় মিলেছে।
সূত্র : লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে। 

     এই বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

অক্টোবর ২০২৫
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« সেপ্টেম্বর    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১